রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ!
আফগানিস্তানে অতীত শাসনের তীক্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে তালিবান

আফগানিস্তানে অতীত শাসনের তীক্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে তালিবান

ডেস্ক নিউজ: সম্প্রতি আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত কালাফগান জেলা দখলে নেওয়ার কয়েকদিন পর তালিবান জঙ্গিরা স্থানীয় ইমামের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রথম একটি আদেশ জারি করে। জেলার ২৫ বছর বয়সী বাসিন্দা সেফাতুল্লাহ বলেন, ‘আদেশে বলা হয়, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীরা বাজারে যেতে পারবেন না এবং পুরুষদের দাড়ি রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, তালিবান ধূমপানও নিষিদ্ধ করেছে এবং কেউ এসব বিধি লঙ্ঘন করলে তা শক্তভাবে মোকাবিলা করা হবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে।

বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের সাথে সাথে দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে তালিবান। দেশটির অর্ধেকের বেশি জেলা ও প্রধান প্রধান সীমান্ত ক্রসিং দখল এবং প্রাদেশিক রাজধানীগুলো চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে তারা। কিছু এলাকায় সশস্ত্র এই গোষ্ঠী আবারও ইসলামী কঠোর বিধি-বিধান প্রবর্তন করছে; ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার পর মার্কিন-নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অভিযানের আগে পর্যন্ত এ ধরনের বিধি-বিধান চালু ছিল।

গত মাসে তালিবানের সদস্যরা দেশটির উত্তরাঞ্চলের শীর খান বন্দর দখলে নেয়। এই বন্দরের পাঞ্জ নদীর বুকে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত সেতুর মাধ্যমে তাজিকিস্তান-আফগানিস্তানের সড়কপথে যোগাযোগ আছে। শীর খান বন্দরের একটি কারখানার কর্মী সাজেদা ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, বন্দরের পতনের পর নারীদের বাড়ি-ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয় তালিবান।

তিনি বলেন, সেখানে অনেক নারী এবং যুবতী মেয়ে সূচিকর্ম, সেলাই এবং জুতা তৈরির কাজ করছিল। তালিবানের আদেশ আমাদের আতঙ্কিত করেছে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালিবান। সেই সময় কোনো পুরুষ আত্মীয় সঙ্গে নেওয়া ছাড়া নারীরা বাড়ির বাইরে যেতে পারতেন না। মেয়েদের স্কুল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ব্যভিচারের মতো অপরাধের দায়ে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছিল।

তুলনামূলকভাবে পুরুষদের স্বাধীনতা বেশি ছিল। তবে তাদের দাড়ি না কাটানোর আদেশ দেওয়া হয়েছিল। নামাজে না উপস্থিত হলে মারধর এবং শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে বলা হয়েছিল।

আফগানিস্তান অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং তালেবানের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও দেশটির কিছু গ্রামীণ এলাকার লোকজন একই ধরনের বিধি-বিধান মেনে চলেন। তবে বর্তমানে দেশটির আধুনিক স্থানগুলোতেও এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপের চেষ্টা করছে তালিবান।

চলতি সপ্তাহে তালেবানের জারিকৃত একটি আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তালিবানের সঙ্গে মেয়েদের বিয়ে দিতে গ্রামবাসীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিধবাদেরও তালিবানের সৈন্যদের কাছে দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে।

তালিবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের নামে জারি করা চিঠিতে দখলকৃত অঞ্চলে সকল ইমাম ও মোল্লাকে তালিবান যোদ্ধাদের সাথে বিয়ের জন্য ১৫ বছরের কমবয়সী মেয়েদের এবং ৪৫ বছরের কমবয়সী বিধবাদের তালিকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নতুন এই আদেশ তালিবানের অতীত শাসনের তীক্ত স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনছে আফগানিস্তানে। কিন্তু নতুন আদেশ জারির বিষয়টি অস্বীকার করে তালেবান এটিকে প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, এসব ভিত্তিহীন দাবি। ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

কিন্তু সম্প্রতি তালিবানের দখলে নেওয়া এলাকাগুলোর বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাজিকিস্তান সীমান্তের ইয়াওয়ান জেলার দখল নেওয়ার পর স্থানীয় একটি মসজিদে সেখানকার বাসিন্দাদের জড়ো করে তালিবান।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাজির মোহাম্মদ (৩২)। তিনি বলেন, তালিবান কমান্ডাররা আমাদের বলেছেন, রাতের বেলা কেউই বাড়ি থেকে বের হওয়ার অনুমতি পাবেন না। এবং কেউই বিশেষ করে তরুণরা লাল এবং সবুজ রঙের পোশাক পরতে পারবেন না। আফগান পতাকার রঙের কথা উল্লেখ করে তালিবানের কমান্ডাররা এই নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তালিবানের আদেশ এখানেই শেষ নয়। নাজির বলেন, প্রত্যেককে পাগড়ি পরতে হবে এবং কেউ দাড়ি কামাতে পারবেন না। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে এবং এরপর তারা আর পড়াশোনা করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয় তালিবান। ইয়াওয়ান জেলার এই বাসিন্দা বলেন, তালিবান জোর দিয়েছে যে, তারা মানবাধিকার—বিশেষ করে নারীদের অধিকার রক্ষা করবেন। তবে তা শুধুমাত্র ইসলামি মূল্যবোধ অনুযায়ী।

তালিবান দখলে নেওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে তাজিকিস্তান সীমান্তের শহর থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণের কুন্দুজে পাড়ি জমিয়েছেন সাজেদা। তিনি বলেন, ‌‘আমরা তালিবানের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কখনই কাজ করতে পারবো না। যে কারণে এলাকা ছেড়েছি।’

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com